শুরুটা মাত্র তিন বছর আগে। সময়টা কম, কিন্তু বেগ আর আবেগ ছিল অনেক বেশি। সেকারণেই এইটুকু সময়ে রোর বাংলার অতিক্রান্ত পথটার দৈর্ঘ্য হয়ে গেছে কল্পনাতীত। প্রথাগত মিডিয়ার চিন্তাধারার একদম বাইরে এসে বিকল্প গণমাধ্যমের ধারণাটিকে এমন বিপুল জনপ্রিয় করে তোলার সামান্য কিছু কৃতিত্ব নেওয়ার মতো কাজ নিশ্চয়ই করে ফেলেছে রোর বাংলা, নাহয় কোটিরও বেশি পাঠক-দর্শকের কাছে কীভাবে পৌঁছে গেলাম আমরা?
বাদবাকি সিংহভাগ কৃতিত্বের পুরোটাই তাদের, যারা কাছে এসেছেন। যারা আস্থা রেখেছেন, জানিয়েছেন ‘ভালোবাসি’। আর প্রতিদিন অপেক্ষায় থেকেছেন নতুন লেখা, নতুন ভিডিও, নতুন তর্ক আর নতুন আলাপের জন্য।
এইদিকে আমরা আমাদের কাজটুকু করে চলেছি একদম বিরতিহীনভাবে। আমরা শুধু বলে গেছি গল্প, যে গল্পে কিন্তু কোনো মিথ্যে থাকে না, বরং থাকে প্রতিটি তথ্যের উৎস, প্রতিটি বক্তব্যের যুক্তি। গভীরভাবে চিন্তা আর প্রকাশের সক্ষমতাই একমাত্র যোগ্যতা- এই কথাটুকুর সাথে পরিচিত আমাদের প্রত্যেক লেখক। কারণ, শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই একটি কথার ভিত্তিতেই আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন দেশের সবচেয়ে উদ্যমী তরুণদের একেকজন, যারা জানতে চান, লিখতে চান, জানাতে চান। আর তাদেরকে শুধু পথের শুরুটা দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে যারা ছিলেন, সেই সম্পাদকদের আবশ্যিক যোগ্যতাগুলোও স্পষ্ট, শাণিত দৃষ্টি আর প্রখর কাণ্ডজ্ঞান। এভাবেই, একটু একটু করে আমরা তৈরি করেছি দেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল লেখক-সম্পাদক পর্ষদ, যারা এখন পর্যন্ত তৈরি করেছেন ১০ হাজারের বেশি ফিচারধর্মী লেখা।
সেইসাথে আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখেছি বাংলায় নির্মিত তথ্যভিত্তিক আর ব্যাখ্যামূলক ভিডিওর প্রতি মানুষের কী প্রচণ্ড আগ্রহ। অবশ্য এই আগ্রহটা তৈরি করে সেটিকে ভালোলাগায় পরিণত করতে এবং একে অভ্যাসে রূপ দিতে একটি দীর্ঘ সময় আমাদের নিতে হয়েছে। সারাদিনের কাজের ফাঁকে চট করে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে ছোট্ট একটি ভিডিও দেখে নতুন কিছু জানার আর বোঝার যে আনন্দ, তার প্রকাশই আমরা পাই একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানে। আমরা যখন রোর স্টুডিও বানিয়েছিলাম, দুই বছরের কিছু কম সময় আগে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি মাসেই মানুষ কেবল ফেসবুকে গড়ে ১ কোটিরও বেশিবার দেখেছেন আমাদের ভিডিওগুলো! এমন তথ্যসমৃদ্ধ ভিডিওর প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ একইসাথে আমরা দেখেছি রোর বাংলার ইউটিউব চ্যানেল আর ইন্সটাগ্রামের পাতায়ও।
রোর বাংলার নিয়মিত লেখকদের অবিরাম শ্রমে বর্ণিল সব বিষয়ে সহস্র লেখার সমাহার তৈরির পর আমরা সবিনয় চেষ্টা শুরু করেছি নিয়মিত পাঠকদের লেখনীকে জানবার। ‘কন্ট্রিবিউটর প্ল্যাটফর্ম’ নামের একটি বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্মের সূচনা হয়েছে গত বছরের শেষনাগাদ, যেখানে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউই চাইলে জমা দিতে পারবেন লেখা, আমাদের নীতিমালা অনুসরণ করে। প্রতিনিয়তই আমরা অসাধারণ সাড়া পেয়ে চলেছি এই কাজটিতে, যার বিস্তারিত নিয়ে আমাদের নিউজরুমে আসবে গোটা আরেকটি লেখা!
শেষ করব রোর বাংলার কর্মীদের প্রতিদিনের একটি অসাধারণ অনুভূতির কথা বলে। আমাদের পাঠক-দর্শকরা প্রতিদিন আমাদের কাছ মেসেজ পাঠান। ফেসবুকের পাতায়, মেইলে, এমনকি ফোনেও! শত শত মেসেজ, প্রতিদিন! কেউ নতুন কিছু জানতে চান, কেউ চান জানাতে। এই মেসেজগুলো পেয়ে আমরা অভিভূত হই, আনন্দিত হই, উচ্ছসিত হই। জ্ঞানের উন্মুক্ত বিকাশের প্রতি এমন অসাধারণ আগ্রহের বার্তাগুলো আমাদের প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত করে। তবে সচেতনভাবেই, কখনও আত্মতৃপ্ত বা গর্বিত হইনি আমরা। কারণ, আমাদের শিখতে চাওয়ার তো সবে সূচনাই হলো, পথচলার আরও বহু বাকি, দৃষ্টির সীমানা যে বহুদূর!