বাংলা ভাষায় ব্যতিক্রমী আর মানসম্মত কন্টেন্ট পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল রোর বাংলার। প্রতিনিয়তই এই প্ল্যাটফর্মের ভাণ্ডারে যোগ হচ্ছে নতুন বিষয়ে লেখা, চমৎকার সব ভিডিও। দেশের নানা প্রান্তের থেকে কাজ করা লেখকদের পাশাপাশি রোর বাংলার রয়েছে সম্পাদক পরিষদ, ভিডিও এডিটিং আর মার্কেটিং টিম। তাই একই ছাঁদের নীচে সবাইকে একত্র করতে গত ২৪ জানুয়ারী রোর বাংলার অফিসে আয়োজন করা হয় 'রোর বাংলা লেখক-সম্পাদক সম্মিলনী-২০২০'।
রোর বাংলার মানসম্মত কন্টেন্টের অন্যতম প্রাণশক্তি এর তরুণ লেখকেরা। যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারা বাংলাদেশে, দেশের বাইরে থেকেও লিখে যাচ্ছেন কয়েকজন। তাই এই লেখকদের একত্র করতে রোর বাংলার মিরপুর ডিওএইচএসের অফিসকে সাজিয়ে তোলা হয় বর্ণাঢ্যভাবে। রোরের দীর্ঘ যাত্রায় নতুন পুরাতন লেখক, কন্ট্রিবিউটর প্যানেলের লেখকদের আমন্ত্রণ জানানো হয় অফিসে।
রোর বাংলার গতিশীলতার অন্যতম কারণ হলো এই প্ল্যাটফর্মের বেশীরভাগ লেখক অনলাইনেই তাদের লেখা জমা দেওয়ার কাজটি করে থাকেন, সম্পাদকেরা তাদের লেখা সম্পাদনার কাজটিও অনলাইনেই করে থাকেন। তাই তাদের মধ্যে যোগাযোগকে দৃঢ় করা এবং সবার লেখালেখির অভিজ্ঞতার বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে উঠা ছিলো এই আয়োজনের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
তাই ২৪ তারিখ সকালেই লেখকদের পরিচিতি পর্ব এবং রোরের সাথে তাদের অভিজ্ঞতার গল্প দিয়ে আয়োজন শুরু হয়। এডিটর-ইন-চীফ তাহসীন মাহমুদ এবং সম্পাদক পরিষদের বাকি সদস্যরাও এই সময় লেখকদেরকে তাদের লেখার মান উন্নয়নে পরামর্শ দেন।
রোর বাংলার লেখক সম্পাদকদের এই মিলনমেলায় তাদের জন্য ছিলো লুডু, ডার্টে নিশানা ভেদের ব্যবস্থা। পরিচয়পর্বের পর থেকে মধ্যাহ্নভোজনের আগের সময়টাতে লেখকরা লুডু আর লক্ষ্যভেদে ব্যস্ত ছিলেন।
লুডু-লক্ষ্যভেদ, গল্প আর আড্ডা মুখরিত প্রাঙ্গণে রোর বাংলা পরিবারের সদস্যদের জন্য ছিল মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা। মধ্যাহ্নভোজনের পরে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে এডিটর-ইন-চীফ তাহসীন মাহমুদ রোরের পথচলা, কন্টেন্টের মান উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। সামনের দিনগুলোতে রোরের লক্ষ্য কি হবে সেই নিয়েও দিক নির্দেশনা দেন লেখক সম্পাদকদের। মানুষের জানা অজানার নানা তথ্য দিয়ে রোর বাংলা যে ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে সেটিকে আরো গতিশীল এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নানা কর্মপরিকল্পনার কথাও উঠে আসে তার বক্তব্যে। এরপর লেখকদের নানা প্রশ্নের দেন রোর বাংলার হেড অফ ডিজিটাল জাকারিয়া হাসান।
রোর বাংলায় অনেক লেখা পড়েই পাঠকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় অনুরোধ এসেছে বিস্তারিত ভাবে তা বই আকারে প্রকাশ করার। রোর বাংলার পাঠকদের থেকে সাড়া পেয়ে এবারের বই মেলায় আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ এবং মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিকের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যার বিস্তারিত খবরাখবর পাঠকেরা অতি শীঘ্রই রোর বাংলার ফেসবুক পাতায় পাবেন। এই সংবাদটি উপস্থিত রোর বাংলার লেখকদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি ছিলো পুরষ্কার বিতরণী। ২০১৯ সালে লেখকদের লেখার গুণগত মান, পাঠকপ্রিয়তা, সম্পাদক পরিষদের বিবেচনায় নিয়ে লেখক-সম্পাদকদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। রোর বাংলা তার যাত্রার শুরু থেকেই বরাবরই লেখকদের অনুপ্রাণিত করতে, তাদের কাজের মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরষ্কারের দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক রোর বাংলার কে কি পুরষ্কার ঝুলিতে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
প্রথমেই বর্ষসেরা লেখা ক্যাটেগরিতে পুরষ্কার দেওয়া হয়। এই ক্যাটগরিতে চারটি লেখাকে পুরষ্কৃত করা হয়। চারটি লেখার মধ্যে প্রথমটি 'জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও মৃত্যুর গণ্ডি পেরিয়ে যে প্রেম: মির্চা এলিয়াদ ও মৈত্রেয়ী দেবী' শিরোনামের জনপ্রিয় লেখাটির জন্য শর্বাণী দত্ত। 'হেনরিয়েটা ল্যাকস এবং হেলা কোষ: বিজ্ঞানের তরে এক মহীয়সীর অসামান্য ত্যাগের গল্প' শিরোনামের লেখার জন্য ফাহিম খান, 'লেনা: প্লে-বয় থেকে গবেষণা জার্নালে বিখ্যাত হয়ে উঠা ছবিটি' লেখার জন্য মোনেম আহমেদ, 'ফোর্ডল্যান্ডিয়া: আমাজন বনে হেনরি ফোর্ডের পরিত্যাক্ত শহরের গল্প' লেখার জন্য কামরুজ্জামান অমিতকে পুরষ্কার দেওয়া হয়।
সম্পাদক পরিষদের বাছাইয়ে সেরা লেখক হিসেবে 'এডিটর্স চয়েস (রাইটার)' পুরষ্কার জিতে নেন আহমেদ দ্বীন রুমি এবং মাসুদ ফেরদৌস ইশান। খেলাধুলায় 'এডিটর্স চয়েস' পুরষ্কার যায় মীর অর্ণব কবিরের হাতে আর সিনেমায় কুদরতে জাহান জিনিয়ার হাতে। পাঠকদের সাড়ার ভিত্তিতে 'মোস্ট পপুলার রাইটার' হিসেবে পুরষ্কার পেয়েছেন শামিউল আলম শোভন। তার 'মনের ভাঙনে ভাঙিয়া গেছে ঘর' এই লেখাটি ছিলো পাঠকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়।
লেখকদের ভোটে সেরা লেখা নির্বাচিত হয়েছে দুইটি লেখা। একটি উচ্ছাস তৌসিফের 'অ্যান্টওয়ার্প হীরক কেলেঙ্কারি: ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হীরে চুরির রোমাঞ্চকর কাহিনী' আরেকটি নাফিস সাদিকের 'সত্যজিৎ রায়ের 'মহানগর': নগরজীবনের চিরকালীন রূপায়ন'। কন্ট্রিবিউটর প্যানেলে অবদানের জন্য সেরা কন্ট্রিবিউটর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মঞ্জুর মোর্শেদ।রোর বাংলার পথচলায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা জানানো হয় রোর বাংলার 'টেক টিম', 'সেলস টিম', 'ফিন্যান্স টিম'কে। বিশেষ সম্মাননা জানানো হয় পাপিয়া দেবী অশ্রুকে, রোর বাংলার দীর্ঘ পথচলায় যিনি পাঠকদের উপহার দিয়েছেন চমৎকার সব লেখা।
রোর বাংলা লেখক-সম্পাদক সম্মিলনীর এইবারের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো লেখকদের ভোটে নির্বাচিত সম্পাদক। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সেরা সম্পাদকের পুরষ্কার পেয়েছেন মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক।
সেরা ভিডিও প্রোডিউসারের পুরষ্কার উঠেছে নাগীব আহমেদের হাতে। ২০১৯ সালের বর্ষসেরা লেখকের পুরষ্কার পেয়েছেন শাহ মো. মিনহাজুল আবেদীন।
এডিটর-ইন-চীফ তাহসীন মাহমুদকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। এছাড়াও রোর বাংলার লেখক-সম্পাদক সম্মিলনীতে আসা লেখক সম্পাদকদের সবার জন্য ছিলো চাবির রিং, ডায়েরি এবং টি-শার্ট।
রোর বাংলা লেখক-সম্পাদক সম্মিলনীর শেষ পর্বে ছিলো ছবি তোলার পর্ব। চমৎকার এই আয়োজনে উচ্ছ্বসিত আর অনুপ্রাণিত পুরো রোর বাংলা টিমের একসাথে গ্রুপ ছবির মধ্য দিয়েই শেষ হয় 'রোর বাংলা লেখক-সম্পাদক সম্মিলনী-২০২০' এর আয়োজন।